ঢাকা, মঙ্গলবার ০৩, ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:১২:৫৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিবিসির ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় বাংলাদেশের রিক্তা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন সেই তরুণী, বিয়ের চাপ দেওয়ায় খুন করেন প্রেমিক শীতের দাপটে কাঁপছে পঞ্চগড়, বিপর্যস্ত জনজীবন আজ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ভারতে হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ

কোমরতাঁত বদলে দিয়েছে ৭০  নারীর জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:৪০ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২২ শুক্রবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

পাহাড়ি নারীরা জুম চাষের পাশাপাশি বাড়তি উপার্জনের জন্য কোমরতাঁত বোনেন। আর এই অর্থ ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচের কাজে ব্যবহার করেন। তবে নিজেরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হওয়ায় সুতা কিনতে পারেন না। অন্যের কাছ থেকে সুতা এনে কাপড় বানিয়ে নির্দিষ্ট একটি পারিশ্রমিক পান মাত্র। এতে করে তাদের কষ্টের তুলনায় পাওয়া অর্থ খুবই কম।

এমনই ৭০ জনের জীবন বদলে দিয়েছেন ফেরদৌসী পারভীন নামে এক নারী। তিনি ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির পাহাড়ে ঘুরতে এসে এদের সন্ধান পান। পরে স্থানীয় পরিচিতজনদের মাধ্যমে পাহাড়ি নারীদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। বর্তমানে ৭০টি পরিবার স্বাবলম্বী।

জানা গেছে, সহায়তা পাওয়া এই ৭০ জন নারী এখন সুতা দিয়ে কাপড় বানিয়ে সেই কাপড় বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে অধিক পরিমাণে সুতা কিনতে পারছেন। ফলে আয় বেশি হচ্ছে, পরিবারে সচ্ছলতা আসছে।

ফেরদৌসী পারভীন গত বছর ৪০ জনকে এবং এই বছর ৩০ জন নারীকে কোমরতাঁত বোনার সুতা দিয়েছেন। তিনি যে পরিমাণ সুতা তাদের দিয়েছেন, তা দিয়ে একেকজন ৮টি কাপড় বানাতে পারেন। যার পাইকারি মূল ২৫-৩০ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে আবার সুতা কিনে কাপড় বুনে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে যে আয় হচ্ছে, তার একটি অংশ দিয়ে সুতা কিনছেন আর অবশিষ্টটা সংসারের চাহিদা মেটাচ্ছেন। 

এমনই একজন সুবিধাভোগী সুজিতা ত্রিপুরা। তিনি বলেন, আমার স্বামী তিন বছর ধরে অসুস্থ। কোনো কাজ করতে পারেন না। জুম চাষ করেও সংসার চালাতে পারি না। মানুষের কাছ থেকে সুতা এনে বাসায় কোমরতাঁত বুনতাম। এতে শুধু নির্দিষ্ট একটা বানি খরচ পেতাম। পরে ফেরদৌসী পারভীনের কাছ থেকে সুতা পেয়েছি। এই সুতা দিয়ে কাপড় বানিয়ে ২৪ হাজার টাকা পুঁজি হয়েছে। এখন আর টাকা নিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। খুব সুন্দরভাবে সংসার চালাতে পারছি।

সুবিধাভোগী অঞ্জু ত্রিপুরার মেয়ে মিমি ত্রিপুরা বলেন, আমরা অনেক গরিব মানুষ। বাবা-মা জুম চাষ এবং কোমরতাঁত বুনে সংসার চালাতেন। আমার মা মানুষের কাছ থেকে সুতা এনে কাপড় বুনতেন। এতে শুধু পারিশ্রমিক পেতেন। কিছু দিন আগে ঢাকা থেকে এসে এক ম্যাম মাকে সুতা দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এই সুতা দিয়ে মা কাপড় বানিয়ে বিক্রি করে অনেক টাকা পেয়েছে। সেগুলো দিয়ে আবার কিছু সুতা এনে কাপড় বানায়। এখন আমরা অনেক ভালো আছি।

রমিতা ত্রিপুরা বলেন, সুতা পেয়ে আমার জীবন পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমি কখনো ভাবতেও পারিনি যে এমন সহযোগিতা পাব। আগে আমি মানুষের কাছ থেকে সুতা এনে কাপড় বুনতাম। এখন ম্যাম সুতা দিয়েছেন। তা দিয়েই আমি সফল। কাপড় বিক্রির টাকার কিছু অংশ দিয়ে সুতা কিনে বিকি টাকা অন্য কাজে লাগিয়েছি।
পাহাড়ি নারীদের বানানো কাপড়ের ক্রেতা বীনা ত্রিপুরা বলেন, আমাদের পাহাড়ি নারীরা সংসারে পুরুষের পাশাপাশি অনেক ভূমিকা পালন করে থাকে কোমরতাঁতের মাধ্যমে। কাপড় বানিয়ে সংসারে সচ্ছলতা নিয়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু অর্থের অভাবে তারা সেটা পারে না। মানুষের কাছ থেকে দাদন নিয়ে কাজ করে। তবে সেটা থেকে আয় হতাে খুবই কম। তাদের এই কাজে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছেন ফেরদৌসী পারভীন নামে এক ম্যাম। তার  সহযোগিতায় পরিবারগুলো এখন স্বাবলম্বী।

ফেরদৌসী পারভীন বলেন, আমি যখন কলেজে চাকরি করি, তখন থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। চাকরি জীবন থেকে অবসরে যাওয়ার পর ভাবলাম অন্য কিছু করা যাক। পাহাড় আমার বরাবরই ভালো লাগত। সে সুবাদে খাগড়াছড়ি ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেখানে সুরিদদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তাদের মাধ্যমেই নৃতাত্ত্বিক মানুষের দুর্দশার কথা জানতে পারি। জানতে পারি তাদের কর্মস্পৃহা ও পরিশ্রমের কথা। পুঁজির অভাবে তারা সুতা কিনে কোমরতাঁত বুনতে পারেন না। আমি তখন সিদ্ধান্ত নেই পুঁজি দিয়ে তাদের সাহায্য করব। সেই থেকে দুই বছরে ৭০ জনকে সহযোগিতা করছি। এর মাধ্যমে তারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এক সময় পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত তুলা থেকে চরকার সাহায্যে সুতা তৈরি করে পিনন ও থামির কাজ করা হতো। কিন্তু সম্প্রতি পাহাড়ি এলাকায় তুলার উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং তুলা থেকে সনাতন পদ্ধতিতে সুতা তৈরি সময় সাপেক্ষ হওয়ায় বাজার থেকে সুতা কিনেই কাপড় বুনতে হচ্ছে। তবে কোমরতাঁতে আধুনিক প্রযুক্তির বদলে এখনো কাপড় বোনার জন্য পাহাড়ি নারীরা বাঁশ ও কাঠের নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকেন।